ডেইলি নরসিংদী ২৪, বেলাব প্রতিনিধি : নাম তার তপন সুত্রধর। বয়স আনুমানিক ৫০। পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী। দুই ছেলে আর বউ নিয়ে তার চারজনের সংসার নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলার ভাবলা গ্রামের সুত্রধর পাড়ায় তার বাড়ি। বড় ছেলে তনয় সুত্র ধর (১৮) আর ছোট ছেলে প্রণয় সুত্রধরকে ( ১৫ ) নিয়ে টানাটানির সংসার তার।
সামান্য ভিটেবাড়ি ছাড়া আর কোন জমিজমা নেই। দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট করতে করতে অবশেষে ২/৩ জনের পরামর্শে বড় ছেলে প্রণয়কে বিভিন্ন জায়গা থেকে ধার দেনা করে বিদেশে পাঠায়। অনেক স্বপ্ন আর আশা নিয়ে বুকে কষ্ট চাপা দিয়ে মা-বাবা তাদের আদরের সন্তানকে বিদেশ পাঠায়। ভালভাবে পৌঁছে যথাসময়ে কাজেও প্রবেশ করে। কিন্তু, ২/৩ মাস অতিবাহিত হতে না হতেই বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সে কারণে প্রণয়কেও সরকারি বিধান মতো সৌদি আরবের লকডাউনের নিয়ম মেনে কাজ বন্ধ করে তার বাসায় নিরাপদে থাকতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলা লকডাউনে তার উপার্জন বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে বাড়িতে টাকা পাঠানোও বন্ধ হয়ে যায়।
এদিকে বাংলাদেশেও লকডাউন শুরু হয় এবং কাঠমিস্ত্রী তপন সুত্রধরের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। সবকিছু বন্ধ হলেও থেমে থাকেনি সুদ খোর আর অতিলোভী মহাজনদের দৌরাত্ম্য। আবার সাময়িক কিস্তি বন্ধ থাকলেও মাঝে মধ্যেই নিয়ম ভঙ্গ করে অতিউৎসাহী এনজিও কর্মীদের ফোনে টাকা দেওয়ার তাগিদ সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পরিবারের চাহিদা পূরণের তাগিদতো আছেই।
জানা যায়, ছেলেকে সৌদি আরব পাঠাতে তপন প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা এনজিও, সুদখোর মহাজন এবং আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে সংগ্রহ করে। ঋণ নেওয়ার পর তিন/চার মাস ভালভাবে পরিশোধ করলেও লকডাউন শুরু হলে সবকিছু অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু সুদখোরদের আস্ফালন বিপর্যস্ত করে তুলে তপনের জীবন। শত বুঝিয়েও তাদের থামানো যাচ্ছেনা। তারা কোন কথা শুনতে নারাজ। এদের যন্ত্রনায় দিশেহারা তপন এই লকডাউনে যেখানে বাড়িতে থাকার কথা সে বাড়ির বাইরে দূরে দূরে থাকে। তাদের যন্ত্রণায় ঘরে থাকা দুস্কর। তবে এনজিওর ঋণ স্থগিত থাকায় কিছুটা ছাড় পাচ্ছে এখানে। কিন্তু সুদখোরদের সুদের টাকা পরিশোধ করার জন্য সকাল সন্ধ্যা চাপ আছেই।
এমতাবস্থায় দিশেহারা তপন সুত্রধর এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরছে টাকার জন্য। কিন্তু এ কঠিন সময়ে কে দিবে তাকে টাকা!! টাকা না নিয়ে বাড়িতেও ফিরতে পারছেনা সে। তাই এ কঠিন করোনা মহামারীতেও এখানে ওখানে বসে রাত হলে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাকে। এরপরও অনেক সময় সুদখোরগুলো রাতে হানা দিচ্ছে তাকে। সে এখন প্রায় নিরাপত্তাহীন। এ কঠিন অবস্থা থেকে মুক্তি চায় চায় তপন। নয়তো বেঁচে থাকাই দায় বলে জানায় সে। এই করোনাকালে বিপদ জানা সত্বেও সুদখোরদের এহেন আচরণ সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন।
Leave a Reply